আজ ২৯ এপ্রিল সেই ভয়াবহ দিন

আনোয়ারুল আজিম সাইফি;

চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার মানুষের কাছে আজকের দিনটি একটি ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিন। আজকের এইদিনে ‘ সাইক্লোন-৯১’ প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল।

হাজার হাজার বাড়িঘর, গবাদিপশু ও ক্ষেত-খামার পানিতে তলিয়ে যায়। লাখ লাখ মানুষ হয়ে যায় গৃহহারা, স্বজন হারা মানুষের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে উপকূলের জনপদ।

২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ের দুইদিন পর দৈনিক পূর্বকোণ বাঁশখালীর সর্বশেষ নিহতের তথ্য দিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করে, রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বাঁশখালীতে নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার। আর গবাদিপশুসহ অন্যান্য পশুপাখির প্রাণহানি প্রায় ২ লাখ।

ঘূর্ণিঝড়ের পরেরদিন ভোরে আমরা চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ এবং স্বজনহারাদের কান্না শুনতে পাই।

বাঁশখালীর বিস্তীর্ণ সাগরচরে হাজার হাজার লাশ দাফন করা হয়। অনেক জায়গায় গবাদিপশু আর মানুষের দেহ একসাথে কবরস্থ করা হয়। বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো হয়ে যায় দিশেহারা। এটিছিল এক নির্মম এবং বেদনার দিন ২৯ এপ্রিল।

সেদিন বাঁশখালীর উপকূলবাসী যে ট্রাজেডির সম্মুখীন হয়েছিল, তার ইতিহাস এবং বাস্তবতা সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম কিছুই জানেনা। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, স্মরণীয় এই দিনটির স্মরণে এই জনপদে চোখে পড়ার মতো কিছুর আয়োজন হয়না।

প্রশাসনিক, কিংবা অন্যান্য উদ্যোগে দিনটির স্মরণে পালিত হয়না তেমন কিছু।সংবাদপত্রের বদৌলতে এই প্রজন্ম জানতে পারে ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহতার কিছু ইতিহাস।

২৯ এপ্রিলের স্মৃতিকে আমরা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ রাখতাম, নিজেদের এলাকায় দিনটির বাস্তবতা উপলদ্ধি করে কোনো কিছুর ধারাবাহিক আয়োজন হতো, তাহলে আমরা উপকূলবাসী আজ অরক্ষিত থাকতামনা।

‘সাইক্লোন-৯১’ এর ৩৩ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও আজও উপকূল অরক্ষিত। পুরো এলাকাজুড়ে নির্মিত হয়নি শক্তিশালী বেড়িবাঁধ। ভাঙা-গড়ার মধ্যে এখনো অরক্ষিত বেড়িবাঁধ।

কোনো কিছুকে ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়। আজকের দিনে উপকূলের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনসমূহের উদ্যোগে ‘ সাইক্লোন-৯১’ স্মরণে নানান প্রোগ্রামের আয়োজন করা আবশ্যকীয় দায়িত্ব।

আমরা ভুলে যাই, আমরা উপলদ্ধি করতে পারিনা, সবকিছুকে মাটিচাপা দিতে চাই, যতদিন আমরা ‘ ‘সাইক্লোন-৯১’ স্মরণে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবনা, ততদিন পর্যন্ত উপকূলের মানুষের দাবিদাওয়া আদায় হবেনা, নির্মিত হবেনা শক্তিশালী বেড়িবাঁধ।