অনলাইন সময় ডেস্ক;
দেশে করোনাকালে শ্রমিক সংকটে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’র কাজের গতি কমেছে। দেশি বিদেশি প্রায় ১ হাজার ৭০০ শ্রমিক নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া এই টানেলে এখন কাজ করছে মাত্র সাড়ে ৭০০ জন শ্রমিক। যেখানে চীনের রয়েছে ২৪০ জন এবং বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে ৫০০ জনের মত। দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার আগে চীনের অনেক শ্রমিক-কর্মকর্তা নিজ দেশে চলে যায়। যার অধিকাংশ এখনো ফিরেনি। এছাড়া, নিজ এলাকায় চলে যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে এখনো অনেকেই কাজে যোগ দিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
শ্রমিক সংকটে টানেল নির্মাণের কাজের গতি কমেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে শ্রমিক সংকট থাকলেও টানেলের মূল কাজ ৮০ শতাংশ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, মূল কাজের বাইরে অন্যান্য কাজগুলো মাত্র ২০ শতাংশ হচ্ছে বলেও জানান তারা।
টানেলের ভিতরে দুটি টিউবের মধ্য দিয়ে যান চলাচল করবে। প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য হবে ২ হাজার ৪৫০ মিটার। একটি টিউব দিয়ে নেভাল থেকে আনোয়ারামুখী যান যাবে। অন্যটি দিয়ে আনোয়ারা থেকে শহরমুখী যান আসবে। আনোয়ারামুখী টিউবটির ১ হাজার ৯০০ মিটার রিং বসানোর কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে জুন মাসে টিউবটির রিং বসানোর কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও করোনায় শ্রমিক সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ৯৪ মিটার দীর্ঘ ও ২২ হাজার টন ওজনের টিবিএম (টানেল বোরিং মেশিন) দিয়ে খনন কাজ করে এই রিং বসানো হচ্ছে। বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টালেন’ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ৫৪ শতাংশ (সার্বিক) সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল এর উপ-প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরু হওয়ার আগে প্রায় ১ হাজার ৭০০ শ্রমিক কাজ করতো। এরমধ্যে চীনের শ্রমিক ছিল ৫০০ এবং বাংলাদেশি শ্রমিক ছিল ১ হাজার ২০০ জন।
করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে চীনের অনেক শ্রমিক নিজ দেশে চলে গেছে। এছাড়াও, করোনার আগে যাওয়া অনেক শ্রমিক আর কাজে যোগ দিতে পারেনি। চাইনিজ ৫০০ কর্মকর্তা ও শ্রমিকের মধ্যে বর্তমানে কাজ করছে ২৪০ জনের মত এবং বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে প্রায় ৫০০ জন। নিজ এলাকায় যাওয়া বাংলাদেশি অনেক শ্রমিক এখনো কাজে যোগ দিতে পারেনি।
শ্রমিক সংকটে টানেলের কাজের গতি কমেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, টানেলের মূল কাজ ৮০ শতাংশের মত চালিয়ে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে মূল কাজের গতি তেমন কমেনি। টানেলে মূল কাজ ছাড়া অন্যান্য কাজ হচ্ছে মাত্র ২০ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে কাজের গতি কিছুটা কমেছে। টানেলের মূল কাজ যথাযথ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে টানেলের সার্বিক অগ্রগতি হচ্ছে ৫৪ শতাংশ। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ আমাদের সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৩৮৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ট্যানেলের কাজ সম্পন্ন হলে নদীর তলদেশে দু’টি টিউব দিয়ে যান চলাচল করবে। একটি টিউব দিয়ে নেভাল থেকে আনোয়ারামুখী যান চলাচল করবে। অন্যটি দিয়ে আনোয়ারা থেকে শহরমুখী যান আসবে। প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য হবে ২ হাজার ৪৫০ মিটার। এরমধ্যে নেভাল থেকে আনোয়ারামুখী টিউবের ১ হাজার ৯০০ মিটার রিং বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল সূত্র জানায়, চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এন্ড কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের কাজ পায়। ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার মূল টানেলের সাথে আনোয়ারা অংশে ৫ দশমিক ৫২৭ কি.মি এবং নেভাল অংশে দশমিক ৫৫ কি.মি সংযোগ সড়ক থাকবে। নগরীর নেভাল একাডেমি পয়েন্ট দিয়ে তলদেশে ঢুকে আনোয়ারা অংশের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) মাঝামাঝি স্থান দিয়ে বের হবে।
নদীর তলদেশে এর গভীরতা হবে ১৮ থেকে ৩১ মিটার।
উল্লেখ্য, চীনের সাংহাই শহরের আদলে চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি এন্ড টু টাউন’ মডেলে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তিসহ সাতটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চার লেন বিশিষ্ট সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্যানেলের মূল খনন কাজ উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যার মধ্যে ঋণ হিসেবে চীনের চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক দেবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। তবে প্রথমে টানেলের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বাড়তি জমির প্রয়োজনীয়তা ও জমির মূল্য বাড়ায় এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।