চট্টগ্রামে বালু খেকোদের কবলে পারকী সমুদ্র সৈকত

আনোয়ারা প্রতিদিনঃ

চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন স্পট  আনোয়ারার পারকী সমুদ্র সৈকত থেকে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বালু ছাড়াও সৈকতের পাশে সরকারি খাস জমি থেকে প্রকাশ্যে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে অন্যত্র।

রহস্যজনক কারনে নীরব স্থানীয় প্রশাসন। প্রভাবশালীদের তালিকায় আছেন সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকার দলীয় কিছু নেতা।সম্প্রতি পারকি বিচ এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সৈকতে নামার প্রথম রাস্তাটি যেটি সৈকতের সবুজ বেস্টনি ঝাউ বাগান এলাকায় এসে মিলেছে, সেখানে বড় ধরণের খাদ তৈরি হয়েছে। খাদের চারদিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এ্যাস্কেভেটর দিয়ে বালু তোলার চিহ্ন।

সৈকত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সৈকত থেকে বালু তুলে তা ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে অন্য কোথাও।জানা যায়, এসব বালু দিয়ে আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমি ভরাটের কাজ চলছে।

১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  আনোয়ারার পারকী সৈকতকে ‘পর্যটন এলাকা’ ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের সাবেক বর্ষীয়ান নেতা ও স্থানীয় সাংসদ মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল এই সৈকতকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা।

২০১০সালে রাশেদ খান মেনন পর্যটনমন্ত্রী থাকাকালে পারকি সৈকত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে এ এলাকার ৬২৯ দশমিক ৬৬ একর জমি পর্যটন কর্পোরেশনের নামে গেজেটভুক্ত হয়।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, সৈকতের বালু উত্তোলনের পর এখন সরকারি খাস জমি থেকে প্রকাশ্যে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালীরা এ কাজ করছেন।প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তারা।

সৈকত থেকে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে আনোয়ারার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভির হাসান চৌধুরীর বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা থেকে মাটি নিয়ে স্কুলের মাঠ ভরাট করা হয়েছে। সৈকতের বালু দিয়ে স্কুলের মাঠ ভরাটের বিষয়টি আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভাল বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

পারকী সৈকত থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন,আনোয়ারা হাই স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য মাটি পাচ্ছিলাম না। তাই সৈকত থেকে বালু উত্তোলন করে স্কুলের মাঠ ভরাট করেছি।’

এতে পরিবেশের ক্ষতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে বালু উত্তোলনের জায়গাটিকে খাদ মনে হলেও, জোয়ারের পানি এলে জায়গাটি আবারও বালুতে পূর্ণ হয়ে যাবে।’

এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেন তিনি।

১নং(খাস) খতিয়ানভুক্ত সরকারি জমি থেকে মাটি উত্তোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে  ইউএনও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

এ দিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘সৈকতের বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে। বালু উত্তোলনের কারণে সৈকতের সবুজ বেষ্টনী (ঝাউ বাগান) ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

সুত্র-সকালের সময়,