প্রতিনিয়তই বাসা থেকে বের হতে হয়। সংবাদ খুঁজতে কিংবা জীবিকার তাগিদে। তবে মাঝেমধ্যে যেতে হয় মাতৃভূমি আনোয়ারাতে। ক’দিন ধরে বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে(বিশেষত বটতলী, চৌমুহনী) মানুষের ভিড় দেখে অবাক হয়েছি, সম্ভবত স্বাভাবিক সময়েও ঈদের দিন দশেক আগে এত ভিড় দেখিনি!
টিভি নিউজ, পত্রিকার রিপোর্ট করে, পড়ে বা দেখে বুঝেছি, কেনাকাটার জন্য পাগল হয়ে যাওয়ার এমন চিত্র সারা দেশের বাস্তবতা।
এ বাস্তবতা আমি ভাবছিলাম-
#এক. দিনকে দিন করোনায় আক্রান্ত বাড়ছে, মানুষের কি ভয় নেই? যদি ভয় থাকে তবে বিলাসী কেনাকাটায় কেন এত পাগলপারা?
#দুই. দুই মাসের লকডাউনে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের নাকি অভাব? তাহলে এই ঈদ কেনাকাটার টাকা আসছে কোথা থেকে?
গতকাল এ দুটি চিন্তার হিসাব বকেয়া রেখেই আজ সকালে বেড়িয়েছিলাম, এক মানবিক বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে।
এক বছর ধরে ঘরে পরে আছে অসুস্থ বৃদ্ধ। উনার স্ত্রীও বাত ব্যাথায় ঠিকমত হাঁটতে পারে না। ইতোপূর্বে চিকিৎসা খরচে খুইয়েছেন বসত করার ঘরের জায়গাটিও। দুই ছেলের ঘরে ৬ ও ৪ জন সদস্য, কৃষক সন্তানদের নিজেদেরই চলে না, বাবা-মা’কে দেখবে কিভাবে?
ইতিমধ্যে দুবার সরকারী সাহায্য হিসাবে ১২ কেজি চাল পেয়েছেন, তা থেকে ঘরে এখনো কেজি দেড়েক চাল আছে। অসুস্থ স্বামী রোজা রাখতে পারে না। স্ত্রী রোজা রাখছে পান্তা খেয়ে।
আমার মনে হচ্ছিলো, এ দেশের মানুষের এত টাকা যে, দুই মাস ধরে সবকিছু বন্ধ থাকার পরও, করোনায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি পেরিয়েও ঈদ কেনাকাটার জন্য পাগল হয়ে গেছে।
সেই মানুষগুলো কি তাদের প্রতিবেশীর ঠিকমত খোঁজ খবর নিচ্ছেন?
এই মুহুর্তে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে কেউ এলাকায় ফিরে পাশের বাসায় আসলে, সকলে সতর্ক হয়ে ওঠেন। কেন ওঠেন? নিজেদের বাঁচার জন্য।
তাহলে বিষয়টি দাঁড়ালো- মহামারী থেকে বাঁচতে শুধু নিজে ভালো থাকলে হবে না, প্রতিবেশীদেরও সুস্থ্য থাকতে হবে।
তাহলে এটা কেন ভাবছেন না- ঈদের আনন্দ শুধু ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি করে বাচ্চার জন্য শার্ট-প্যান্ট, বৌয়ের জন্য শাড়ী-ব্লাউজ, আর নিজের জন্য পাঞ্জাবী কেনা নয়। ভালো থাকতে হলে প্রতিবেশীদের নিয়ে ভালো থাকতে হবে।
অথচ করুন বাস্তবতা- আপনি যখন হাজার টাকায় কেনাকাটা করছেন, তখন আপনার পাশের বাসার বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা তখন পান্তা খেয়ে, কখনো না খেয়েই রোজা রাখছে!
অবশ্য এটা আমাদের জন্য কোন বিষয় নয়। আমরা নিজেরা ভালো থাকার অসুস্থ প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। বিবেক আগে যাত্রা পালায় আসতো, এ ড্রামা সিরিজের যুগে বিবেক তো বটেই নুন্যতম বোধ বুদ্ধিও লোপ পেয়েছে।
আমরা ভুলে গেছি, একদিন সবকিছুরই হিসাব দিতে হবে। হিসাব দিতে হবে প্রতিবেশীর হক পূরণ না করার, হিসাব দিতে হবে স্বার্থপরের মত নিজে ভালো থাকার।
আশার কথা, স্বার্থপরের মত নিজেকে ভালো রাখার অসুস্থ প্রতিযোগীতায় আমরা যেখানে মার্কেটে কেনাকাটা করছি, আমরা করোনাকে ভয় পাই না!
এত সাহসীরা পরকালের প্রশ্নে জবাব দিতে ভয় পাবে? প্রশ্নই আসে না….
এম সাদ্দাম হোসাইন সাজ্জাদ
লেখক ও সাংবাদিক,
আনোয়ারা,চট্টগ্রাম।