একাওরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী-বিদেশী বন্ধুদের ইতিহাস চিরস্বরনীয়

জসিম উদ্দীন —–
বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে থেকেই বহির্বিশ্বের নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণ ছিল । মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল বিদেশীদের নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্বরনীয় হয়ে থাকবে ।

বাংলাদেশেরর স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রাণের বন্ধু শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী । পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন বাংলাদেশেরর নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে তখন অসংখ্যা বাঙালি- প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তের ওপারে গিয়ে পেয়েছিলেন জীবনের নিরাপওা । ১৯৭১ সালে শরণার্থী শিবিরে মানবিক বিপর্যয় দেখতে এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী- শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী । শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া প্রায় এক কোটি মানুষকে খাদ্য, বাস্হান ও চিকিৎসা দিয়ে সর্বোচ্চ সহায়তা করেন তিনি।

বীরপ্রতীক ওডারল্যান্ড : বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ন ও সাহসি ভূমিকা রেখেছিলেন, নেদারল্যান্ডের বংশোদ্ভূত অষ্ট্রেলিয়ান নাগরিক মি: ওডারল্যান্ড ।

সায়মন ড্রিংক : কলম আর ক্যামেরা হাতে নিয়ে জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুূদ্ধে নিরীহ বাঙালির পাশে এসে দাড়িয়েছিলেন ডেইলি টেলিগ্রাফের সাংবাদিক সায়মন ড্রিংক ।

লেয়ার লেভিন : মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্হার সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন শরনার্থী শিবিরে আর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে ক্যামেরা হাতে ঘুরে বেড়াতেন লেয়ার লেভিন। সুযোগ পেলে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলে এসে সেখানে অবস্হানরত মুক্তিযোদ্বা ও গেরিলাদের দেশাত্মবোধক গান শুনিয়ে, পুতুলনাচ শুনিয়ে উজ্জীবিত করতেন ।

অ্যালেন গিন্সবার্গ : কবিতা-ছড়ায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আলোড়ন তুলেছিল কবি ও ছড়াকার অ্যালেন গিন্সবার্গ ।

মার্ক টালি : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এবং পাকবাহিনীর গণহত্যার সংবাদ বিশ্ববাসীর সামনে প্রচারে অনন্যা ভূমিকা পালনকারী বিবিসি’র সাংবাদিক মার্ক টালি। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া উপহার পেয়ে অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন সাংবাদিক স্যার উইলিয়াম মার্ক টালি।

কিশোর পারেখ : ভারতীয় দূঃর্সাহসিক ফটোগ্রাফার । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে ক’জন সফল ক্যামেরাযোদ্বা মুক্তিযুদ্ধের চিত্র ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন তাদের অন্যতম কিশোর পারেখ। সিভিলিয়ান হয়ে যুদ্ধকেএের ছবি তোলা খুব কঠিন ব্যাপার ছিলো। তাই তিনি পাকিস্থানের পোষাক পরে ঐতিহাসিক কাজগুলো সাহসিকতার সাথে সম্পূর্ন করেছিলেন ।

অকৃত্রিম বন্ধু অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি : বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালিন সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে পাকবাহিনী কতৃক গণহত্যার বিরুদ্বে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন কেনেডি । ভারতে আশ্রয় নেয়া এক কোটি শরনার্থীর দূর্দশা স্বচোক্ষে পর্যবেক্ষণ করে ফিরে এসে সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট করেছিলেন অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি ।

পল কনেট দম্পতি : বাংলাদেশে নিরীহ জনগনের উপর অস্ত্র ব্যাবহার, নির্মম হত্যাকান্ডের বিরুদ্বে লন্ডনে জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিলেন পল কনেট দম্পতি । মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন, বাংলাদেশে খাদ্যসামগ্রী ও ঔষধপণ্য পাঠানোর জন্য তারা “অপারেশন ওমেগা ” নামে একটি সংস্হা করেন ।

এ সংবাদ পাকবাহিনী জানতে পারে । ঢাকা থেকে কনেটকে গ্রেফতার করে । পাকিস্তান সামরিক আদালত কনেটকে দুই বছরের সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে রাখেন । তিনি কারাবন্দী থাকলেও তার স্ত্রী ” অপারেশন ওমেগা’র কার্যক্রমকে দূঃর্সাহসিকভাবে এগিয়ে নেন।।

জোসেফ কর্ণেল: মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত বন্ধু ছিলেন-টরেন্টোর জোসেফ কনেল । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন কনেল । বিদেশে যে ক’জন বন্ধু বাংলাদেশের সংস্কৃতি, বাংলাভাষার প্রতি সত্যিকারের দরদ দেখিয়েছিলেন তাদের একজন জোসেফ কনেল ।
আজ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের বিদেশী অকৃত্রিম ও পরম সকল বন্ধুদের বিনম্র চিত্তে স্মরন করছি।
জয়বংলা- জয়বঙ্গবন্ধু ,,বাংলাদেশ চিরজীবি হোক ।

লেখক -জসিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম।